নীলাদ্রি রুজ
এইতো সেদিন ফাগুন ছিলো। ঘর আলো করা ছেলে মেয়ে নাতি নাতনী নিয়ে ভরা সংসার ছিলো। ফাগুনের বাতাসে ভেসে আসতো শিমুল, পলাশ, আমের মুকুলের সুবাস। মনে পড়ে মলির সেই পুরোনো দিনের কথা। ভাগ করে নেয় তার বর্তমান দিনের বান্ধবীদের সঙ্গে।
শহর থেকে কিছুটা দূরে ওরা থাকে। দুটো হল ঘর। জনা কুড়ি একসাথে বেশ আনন্দে কেটে যায়। সবার সাথে কথা বলে মনের কোণে জমে থাকা অভিমানের মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরিয়ে দেয়।
আজ দোলের দিন। সকাল থেকে মলির শরীরটা খুব ভালো যাচ্ছে না। মাথাটা ঘুরছে। বমি বমি ভাব আসছে। জ্বর আসছে। চুপচাপ নিজের বিছানায় শুয়ে আছে। খবর যায়, ডাক্তারের কাছে।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে নাড়ি টিপে দেখে। অনেকক্ষণ পর, শুধু একটা কথাই বলে। বাড়িতে খবর দিন।
তার বর্তমান আত্মীয় স্বজনের মন খারাপ হয়ে যায়। ওরা বুঝতে পারে কাল থেকে হয়তো উনিশ জনের পাত পড়বে। একে একে সবাই আসে। মলিকে ঘিরে ধরে। সবাই তাকে প্রশ্ন করে —
রঞ্জিতা বলে- কি রে, আজতো দোল। রঙ মাখবি না?
মলিনা বলে- দেখ রাইকিশোরী তোর কাছে রঙ মাখবে বলে অপেক্ষা করে আছে। চল, চল ওঠ। আর শুয়ে থাকিস না।
মনিকা বলল– ওঠ সখী হাত ধর। আমরা আজ পলাশ ফুলে সাজবো।
মলির চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো। চেষ্টা করলো কিছু বলার, মুখে কোনো আওয়াজ বের হলো না। মলি দেখলো — একটা রথ এসেছে। সেই রথে বসে আছে, একসাথে সাতপাকে ঘোরা সেই লোকটা। হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মলি উঠলো। ধীরে ধীরে ওর হাত ধরে রথে চড়ে বসলো।
মলির সখীরা ওর পায়ে, মাথায় ফাগের রঙে রাঙিয়ে দিলো। বাড়ি থেকে বৃদ্ধাশ্রমে সবাই এসেছে। নাতি নাতনী, ছেলে বৌমা। কেমন যেন মেকি কান্নার একঘেয়ে নাটুকে সুর বেজে চললো।
(কল্পিত কাহিনী)