গৌতম তরফদার
বেলা ন'টা। চারিদিক ঢাকা কুয়াশার চাদরে। পৌষের শেষলগ্নে টাঙ্গন নদীতে নৌকায় চড়ুইভাতির আয়োজন প্রাইভেট মাষ্টারের উদ্যোগে তার ২০ জন নবম-দশমের ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে। সাউন্ড বক্সে বাজছে:
” বাড়িয়েছি হাত, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে..,
এসো প্রিয়া ভালোবাসার ঘোমটা দিয়ে…..। প্রিতম আর পৌষালি দু'জনেই মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রী নৌকায় মুখোমুখি বসে। অনেকদিন আগে থেকেই ভালোলাগার মিঠানি বাতাস দু'দিক থেকেই বইছিল। অথচ কেউ কাউকে এতদিন বলতে পারেনি। আজকের পরিবেশ, নৌকাবিহার, চড়ুইভাতি, গান..... যেন গোপন কথাটি বলে ফেলার উৎসাহ দিচ্ছে। প্রিতম পৌষালিকে কাছে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলে: ---- আমি যে তোকে কিছু বলতে চাই।
পৌষালির ঝটপট উত্তর:
—- আমিও কিছু বলতে চাই।সেই শুরু। 'তুই' থেকে 'তুমি'র সম্ভাষণ। প্রিতম নার্সিংহোমের কেবিনে শুয়ে। গতকালই হার্টের গুরুতর অপারেশন হয়েছে। পাশে পৌষালি বসে। ডাক্তারের কথায় বিপদ কেটেছে। পৌষালির চোখেমুখে চরম স্বস্তির ছাপ। প্রিতমের হাতে হাত রেখে বলল: ---- ঈশ্বর তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
তোমার মনে পড়ে প্রিতম! ৪৫ বছর আগের সেই পিকনিকের কথা! মন আর নৌকার দুলুনির মাঝে দু’জনের ভালোবাসার প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল। তারপর আর থামা-থামি নেই। প্রেম, বাড়ির অমতে বিয়ে, তোমার চাকরি, ছেলেমেয়ের জন্ম-লালনপালন-শিক্ষার ব্যতিব্যস্ততায় কেমন করে আমাদের বিবাহিত জীবনের ৩৫ বছর কেটে গেল।
প্রিতমের দু’চোখে আনন্দাশ্রু। ----- ওই শোনো পৌষালি, দূরে কোথাও মাইকে বাজছে সেই গান। শুনতে পাচ্ছো! " বাড়িয়েছি হাত, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে.., এসো প্রিয়া ভালোবাসার ঘোমটা দিয়ে.....।
_// বুদ্ধুরাম