মলয় সরকার
কুকুর অতি গৃহপালিত প্রাণী। ছোটবেলায় রচনার মুখ্য লাইনই ছিল এটা। এটাই বারবার করে আমরা পড়তাম। যেন গোটা রচনায় এই একটাই লাইন। এটাও একটা ট্যাগলাইন। কুকুরের সাথে তুলনা যে কতবার পেয়েছি ছোটবেলায় তা কহতব্য নয়।
কি বাবা আর কি মাস্টারমশাই সাথে পাড়ার জ্যাঠা কাকুরাও কম নয়। আর পাড়ার যত লালু ভুলু কালু তারা তো সবাই আমাদের বন্ধু ছিল। আমাদের সাথে আড্ডায় যোগদান করত আর খেলত তো বটেই। সত্যি তারা সত্যি কারের বন্ধু ছিল। এখন পাড়ায় লালু-ভুলুদের সাথে বন্ধুত্ব করার কারো সময় নেই, ইচ্ছা তো নেই ই।
এখন আধুনিক যুগে সবার বাড়িতে প্রায় কুকুর ওহো ভুলেই তো গেছিলাম কুকুরকে কুকুর বলিও না এই আপ্তবাক্য এখন মনে রাখা খুব দরকার। এখন এসব ভীষণ সেন্টিমেন্টাল ইস্যু। এখন রকি জিমি রেক্স প্রভৃতি। ছোট্ট চার দেওয়ালের পাখির খাঁচায় এখন সত্যি এরাই বন্ধু। নাহ রম্য রচনা ঠিক রম্য থাকছে না এই ভারি ভারি জ্ঞান ভরা কথায়। আসল কোথায় আসি। এই যে আমি এত জ্ঞান দিলাম আমিও একই দোষে দোষী। আমারও এক পোষ্য। তিনি আবার বছরে বাপের বাড়ি দাদুর বাড়ি করে বেড়ান। শীতকালেই দাদুর বাড়ি বেড়াতে আসা। এই বুড়ো বয়সে তিনি তো আমাকে নাকানি চোবানি খাওয়ান। সারাদিন ধরে তিনি টয়লেটে যান আমি পিছনে জল ঢালতে থাকি। সকালবেলা বিকেল বেলা বেড়াতে যেতে হবে ছাদে। তিনি আবার স্বাস্থ্যচর্চার সাথে সাথে নিজেকে আবার একটু হালকা ও করে নেন। আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে চোরের মত মেথরের কাজ করি। সপ্তাহে এক দুদিন আবার হালকা গরম জলে স্নান শ্যাম্পু দিয়ে। সেটা দিয়ে আবার কি ঝক্কি সেটা আর নাইবা বললাম।তার মাংস ছাড়া রুচি নেই তাও আবার গরম ভাতের সাথে। চল্লিশ টাকা কেজির আলু সিদ্ধ সেটা যে আবার খুব প্রিয়। সাথে আবার সন্ধ্যা বেলার বিস্কুট মুড়ি। ভাগ্যিস চা কফিটা খায় না।আগে সকালে ঘুম থেকে উঠতাম আটটায়। এখন উঠি সাড়ে পাঁচটায়। থুড়ি ঠেলে উঠিয়ে দেয়। চলো দাদু, মর্নিং ওয়াকে ছাদে। অবশ্যই ঘুরে ফিরে চক্রবত। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে তিনি আবার ড্রয়িং রুমে প্রায় প্রাতঃ কিত্য সারেন। বুঝুন এবার আটটার ঘুম সাড়ে পাচটায় উঠে নাতনির হাগু মুতু পরিষ্কার করো। বলুন তো কার ভালো লাগে। তারপর ডাক্তার বদ্দি তো লেগেই আছে। এই মাসে আবার ভ্যাকসিনের সময়। বাপের কাছ থেকে টাকা তো চাওয়া যায় না, প্রেস্টিজ বলে একটা কথা আছে।অগত্যা পঞ্চুতে ইনজেকশন দিতে গিয়ে তিন হাজার, পকেট ফাঁকা। এখন তো প্রায় সীতার বনবাস এর মত অবস্থা। কোথাও বেরোনোর উপায় নেই।এইতো কলকাতায় পরিবারের বিজয়া সম্মিলন, ব্যাস হয়ে গেল একদম খাড়াখাড়ি মিস। কলকাতায় আপনারা কত আনন্দ করবেন আর আমি আমার নাতনির হাগু মুতু পরিষ্কার করবো। ওহো আসল কথাটাইত লেখা হয়নি। এই রচনায় বাপ হচ্ছে আমার ছেলে, দাদু আমি আর নাতনি আমার আদরের সারমেয় ভালো নাম আহ্লাদি আর ডাকনাম আল্লু। সত্যি বর্তমানে এরাই সত্যিকারের আপনজন। অন্তত বর্তমানে আমাদের মত মানুষদের থেকে তো শতগুণে ভালো কি বলেন।
( কাহিনীর ঘনঘটায় রম্য কাহিনীর ঘটনা সত্যি )