সমর কুমার বোস
বীরেন চক্রবর্তীর বয়স এখন আশি। স্ত্রী কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন। দুই ছেলে বড় রমেশ আর ছোট প্রভাত। দুজনেই চাকরি করে।
বীরেন মাসের প্রথম পনেরো দিন রমেশের কাছে আর দ্বিতীয় পনেরো দিন প্রভাতের কাছে খাওয়াদাওয়া করে।
রমেশের বৌ শ্বশুরকে রান্না করে খাওয়াতে একদম রাজি নয়। কিন্তু বাড়িটা যেহেতু শ্বশুরের নামে তাই ওকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে শ্বশুরকে খাওয়াতে হয়।
রমেশ বৌকে বলেছে, ” আর কটাদিন একটু কষ্ট করো। বুড়ো মরলে এই সম্পত্তির অর্ধেক আমরা বুঝে নেবো।”
প্রভাতের বৌ খুব যত্ন করে শ্বশুরকে রান্না করে খাওয়ায়। এই পনেরোটা দিন বীরেন খুব তৃপ্তি করে খায়।
আর প্রভাতও বাবাকে খুব ভালোবাসে।
সেদিন রমেশের বৌ বীরেনকে খেতে দিয়েছে।
কিন্তু এত অখাদ্য খাবার বীরেনের গলা দিয়ে নামলো না। বীরেন না খেয়েই উঠে গেল। প্রভাতের বৌ জানতে পেরে নিজের খাবারটা না খেয়ে শ্বশুরকে খাওয়ালো।
বিকেলে রমেশের বৌ এসে প্রভাতের বৌকে বলল, ” তুমি কেন শ্বশুরকে এত তেল দিচ্ছো, সব বুঝি। ভেবেছো শ্বশুরকে হাত করে পুরো সম্পত্তি লিখিয়ে নেবে ।”
কয়েকদিন পর বীরেনের ঘরে প্রভাত একজন উকিলকে নিয়ে এলো। কিছুক্ষণ থেকে উকিল চলে গেল। রমেশ আর ওর বৌ আড়াল থেকে সব দেখলো।
রমেশ বৌকে বলল, ” মনে হচ্ছে বাবা পুরো বাড়িটা আমাদের ফাঁকি দিয়ে ভাইয়ের নামে দলিল করে দেবে।”
বৌ বলল, ” তাহলে ?”
সেদিন রাতে রমেশের কথামতো ওর বৌ বীরেনের ডিনারে বেশি করে ইঁদুরের বিষ মিশিয়ে দিলো। রাতেরবেলা বীরেন যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মারা গেল।
পরদিন দুপুরে বীরেনকে শ্মশানে পুড়িয়ে বাড়ি
ফেরার পর উকিলবাবু দুই ভাইকে একটা দলিল দেখালো।
দলিলে বীরেন তার পুরো সম্পত্তি দুই ছেলেকে সমান ভাবে ভাগ করে দিয়েছে।
রমেশ হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে বলল, ” বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো।”