ঠোঙা

উত্তম দত্ত

আদর্শ পরিবেশ বান্ধব গ্রাম হিসেবে নিমতিতা গ্রামের নাম গ্রিনিজ বুকে নথিভুক্ত হওয়া এখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা। আর এই কৃতিত্ব অর্জনে যে মানুষটার অবদান অনস্বীকার্য তিনি হলেন মৃত্যুঞ্জয় হালদার। পেশায় তিনি ছিলেন একজন প্রাইভেট শিক্ষক, টিউশনি পড়ানোর সাথে সাথে নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গ্রামের হাটে-বাজারে, সেইসাথে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের কুফল এবং ব্যবহারে পরিবেশে এর কি কুপ্রভাব পরে সেই নিয়েই প্রচার চালাতেন। প্রথম প্রথম গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে টিটকিরি করতো, সেইসাথে গ্রামের রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কম শাসানি শুনতে হয়নি। কিন্তু হালদার স্যার ছিলেন নিজের কর্তব্যের প্রতি অবিচল। গ্রামের দোকানদারেরা এক রাতে তাকে একা পেয়ে পিটিয়ে বেহুঁশ করে দেয়। এতেও তিনি ভয় না পেয়ে নিজের কাজ করে যান। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, নিজের হাতে শাসনব্যবস্থার ক্ষমতা না থাকলে এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করা খুবই দুরুহ ব্যাপার। সেইসাথে গ্রামের মানুষজনকে পরিবেশ শিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারলে এ-সব কিছুই করা যাবে না।

দেখতে দেখতে পঞ্চায়েত ভোট এসে গেলে, নিজের স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে দাঁড়িয়ে পড়েন ভোটে। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভোটের প্রচার করেন এই বলে, “আমাদের এই গ্রামকে আদর্শ পরিবেশ বান্ধব গ্রাম তৈরি করতে চাই সকলের সহযোগিতা ও আপনাদের অমূল্য ভোট। কিন্তু ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর গণনার আগের দিন রাতে আততায়ীরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনেই ছাই হয়ে যায় হালদার দম্পতির জীবন। কিন্তু স্যারের দেখানো স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসে তাঁরই ছাত্রী উর্মিলা। তার নেতৃত্বেই শুরু হয় সমাজ গঠনের আন্দোলন।

বর্তমানে তার ফলাফল এখন তাদের সামনে। সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে প্লাস্টিক বর্জিত গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর গ্রামের অধিবাসীরা পেয়েছে এক নতুন পেশা। ঘরে বসে কাগজের ঠোঙা বানিয়ে বিক্রি করা। আর এই পেশায় উর্মিলা নিজেও জড়িত। কারণ, পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া অর্থে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা খুবই কষ্টকর।

প্রতিদিনের মতো আজও বিকেলে ঠোঙা বিক্রি করে পুরনো বই-খাতা, খবরের কাগজ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে রাতে ঠোঙা বানানোর সময় একটা পুরনো বইয়ের ভেতরে একটা লটারির টিকিট দেখতে পায়। টিকিটটা কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে আবেগের বশে নিজের মোবাইলে টিকিটের ফলাফল দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না উর্মিলা। সারাজীবন পরিশ্রম করেও যা কল্পনা করতে পারেনি, আজ ঠোঙা বানানোর পেশাই তার জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিলো। আর স্যারের দেখানো পথ চলার পুরস্কার পেয়ে, স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে… ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here