ব্রেড আর্নার

উত্তম দত্ত

ইংরেজিতে খুব সুন্দর একটা কথা আছে, “ব্রেড আর্নার।” অর্থাৎ, সংসার নামক গাড়িটিকে সুচারু ভাবে চালানোর জন্য গ্রাম কিংবা শহরতলি থেকে প্রতিদিনই কেউবা কাকভোরে, কেউবা একটু সকালবেলা বেরিয়ে পড়ে নিজদের বাড়ি থেকে শহর কিংবা শহরতলির কর্মস্থলে। এই যাত্রাপথে কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ নিজের দ্বিচক্রযানে আবার কেউ নিজস্ব মোটরগাড়িতে। এই যাত্রাপথের সময়ও হয়ে থাকে ভিন্ন। এরপর সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাঝে দুপুরে খানিকক্ষণ খাবারের সময়টাও কারোও কপালে জোটে, কারও ক্ষেত্রে সেটা থাকে অধরা। তবুও ইচ্ছে না থাকলেও “ব্রেড আর্নার” -দের হাসিমুখে সেসব মেনে নিতে হয়, তাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দুমুঠো খাবার তুলে দেবার জন্য। এই ব্রেড আর্নারদের তালিকায় কে নেই? নারী-পুরুষ পরিচয় এক্ষেত্রে নির্বাচন করা অর্থহীন। তাদের একটাই পরিচয় তারা “ব্রেড আর্নার।” নিজেদের কাজের পরিবেশ এবং কাজের ধরণ ভিন্ন হলেও এরা “ব্রেড আর্নার।” নিজেদের শরীরের জ্বরজারি কিংবা যতক্ষণ না বিছানায় শয্যাশায়ী হচ্ছেন, ততক্ষণই তারা নিজেদের শরীর নামক গাড়িটিকে সচল রাখতে বাধ্য হন এবং তাদের দেখা মেলে প্রতিদিনই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। সামাজিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে এরা বরাবরই পিছিয়ে থাকতে বাধ্য হন। পারিবারিক ক্ষেত্রে এরা পরিবারের প্রধান বলে বিবেচিত হন কেবলমাত্র কথোপকথনের সময়। যেদিন থেকে বন্য মানুষ সভ্য হয়ে পরিবার গঠন করে নিজেদের সভ্যতা গড়ে তুলেছে, সেদিন থেকেই এই প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে। সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে এদের জীবনেও নানাবিধ পরিবর্তন ঘটেছে আধুনিকতার মোড়কে। চাকা আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত এদের যাতায়াত ছিলো পায়ে হেঁটে কিংবা জলপথে কিংবা নৌকায়। কিন্তু বর্তমানে দ্রুতগতির যানবাহনের কারণে এই যাত্রাপথের সময় ও ধকল কিছুটা লাঘব হয়েছে। এই ব্রেড আর্নারদের শরীরের পরিধানের কাপড় থেকে সুগন্ধির পরিবর্তে পাওয়া যায় কায়িক শ্রমের ঘামের গন্ধ। এদের পরিধানের কাপড়চোপড়গুলো বহুলাংশেই দেখা যায় রঙচটা কিংবা তালি দেওয়া। এসব তাদের কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। তাদের কাছে অগ্রাধিকার পায় পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানো নিজের মুখের হাসি বিসর্জন দিয়ে। এদের পায়ের চটি, চপ্পল কিংবা জুতোর অবস্থা পরিবার পরিজনসহ সকলের চোখেই যা দৃশ্যমান হয়, তা কোনক্রমেই গোপন থাকে না কারও চোখে। এরা আছে বলেই পৃথিবীর প্রতিটি কোণে সংসার নামক গাড়িটি চলছে এবং চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here