কলমেঃ- উত্তম দত্ত
রাত তখন আনুমানিক প্রায় বারোটা, বিরতিহীনভাবে মুঠোফোনটা বেজেই চলেছে অসীমের। একপ্রকার বাধ্য হয়ে লেপের থেকে নিজেকে মুক্ত করে ফোনটা রিসিভ করতেই, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ভারি কন্ঠস্বর ভেসে আসে এবং তিনি নির্দেশ দেন, এখনই তাকে আসতে হবে ভক্তিনগর পুলিশ স্টেশনে।
কথাগুলো শুনে অসীমের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পরার অবস্থা। এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যে তাকে যেতে হবে পুলিশ স্টেশনে, এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে স্কুটারটা গ্যারেজ থেকে বের করে সে রওনা দেয় ভক্তিনগর পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
এই মাঝরাতে কোন উটকো ঝামেলা তার জন্য অপেক্ষা করছে এইসব নানান কুচিন্তা উঁকি দিতে থাকে অসীমের মাথায়। এরই মধ্যে স্কুটারটা দুইবার স্ট্রার্ট বন্ধ হয়ে যায়, এখন এই মধ্য রাতে তার প্রিয় বাহনটাও যেন তার সঙ্গ দিতে চাইছে না। স্কুটারকে পুনরায় চালু করার জন্য নানান কসরত করার পর প্রায় দশ মিনিট পরে সেটা সচল হয়।
রাত তখন আনুমানিক প্রায় সাড়ে বারোটা,
অসীম নিজের গন্তব্যে পৌঁছে ডিউটি অফিসারকে জিজ্ঞেস করে, তাকে তলব করার কারণ। সেই ডিউটি অফিসার প্রত্যুত্তরে জানান, “সেটা আইসি সাহেবই জানেন। আমি জানিয়ে দিচ্ছি স্যারকে আপনার উপস্থিতির বিষয়ে।”
আইসি সাহেবের ঘরের কলিং বেলটা বাজার সাথে সাথে, একজন পুলিশ কর্মী ওনার ঘরে প্রবেশ করে এবং ফিরে এসে অসীমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তাকে সাহেবের ঘরে যাওয়ার কথা বলেন।
অসীম দুরুদুরু বুকে দরজার বাইরে থেকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি চাইলে, ভেতর থেকে সেই রাশভারী কন্ঠস্বরটা বলে ওঠে আসুন। আইসি সাহেব উল্টো দিক দিয়ে বসে নানান প্রশ্ন করতে থাকেন, যার বেশির ভাগই অসীমবাবুর কলেজ সময়কার। সেসময় অসীম আমতা-আমতা করে বলে, “স্যার এগুলোতে আমার কলেজ জীবনের ঘটনা। সেসময় আইসি সাহেব বলেন, “এখনও কি মনে পড়ছে না কিছু?”
বলেই হাহা করে হেসে ওঠেন আইসি সাহেব এবং সামনা-সামনি হয়ে বলে ওঠেন শুভ জন্মদিন বন্ধু। এখন ঘড়ির সময় বলছে আজ ঊনত্রিশে ফেব্রুয়ারী, কি করে ভুলি আজ আমার কলেজ জীবনের প্রিয় বন্ধুর জন্মদিন যা প্রতি চার বছর পর পর ফিরে আসে………।
অসীম কি করবে ভেবে না পেয়ে, নিজের হাতদুটো এগিয়ে দেয় প্রিয় বন্ধু অতীশের দিকে আলিঙ্গণের জন্য………..।