ইলিশ মাছ

উত্তম দত্ত

সকালে বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার সময় বীথি দেখে তার ছেলে অয়নের শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। একবার সে ভেবেছিলো আজ কাজে যাবে না। কিন্তু আজ অয়নের জন্মদিন, গত কয়েকদিন যাবৎ সে ইলিশ মাছ খাবে বলে বায়না ধরেছে। আজ যদি কিছু টাকা যোগাড় করতে পারে তাহলে অবশ্যই এ বাড়িতে প্রথম ইলিশ মাছ রান্না হবে। সেইসাথে ছেলেকে সন্ধ্যায় ডাক্তার দেখিয়ে রাতে অয়নকে আশীর্বাদ করে তার খাবার পাতে ইলিশ দিয়ে আজকের দিনটা উদযাপন করবে বলে স্থির করে বীথি।

একটা বেসরকারি হাসপাতালে আয়ার কাজ করে বীথি তার স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় আট বছর যাবৎ। স্বামীর মৃত্যুর আগে সে বাড়িতে বসেই বিড়ি বাঁধতো শ্বাশুড়ির সাথে। তাতে যা আয় হতো সংসারের টুকিটাকি খরচ সামলাতে স্বামীর কাছে হাত পাততে হতো না। আর হাত পাতলেই যে খরচ পাওয়া যাবে তার কোনও সম্ভাবনাও ছিল না। কারণ, তার স্বামী নামক ব্যক্তিটিরও আয় ছিলো যৎসামান্য। তিনি ছিলেন একজন সামান্য ছোট মাছ ব্যবসায়ী। নিজের সাইকেলে মাছ ফেরি করতেন সেই অঞ্চলে। ভারী কাজ করার মতো শারীরিক গঠনও তার ছিলো না। এইভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু এতেও বাঁধ সাধলো নিয়তি। আজও মনে পড়ে সেই অভিশপ্ত দিনের কথা, প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে সাইকেলে মাছ ফেরি করার সময় একটা বালি বোঝাই লরি পিছন থেকে পিষে দিয়ে যায় তাকে। এরপর বাধ্য হয়েই বীথিকে……..

হাসপাতালে পৌঁছে বীথি ভাবতে থাকে কিভাবে টাকার সংস্থান করা যায়। এইসব সাতপাঁচ ভাবার মাঝেই মনে পড়ে যায় সেই স্যারের কথা। যিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসার সময় বীথির সেবাশুশ্রূষায় মুগ্ধ হয়ে বীথিকে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলেন যে কোনও প্রয়োজনে তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য। বীথি কালবিলম্ব না করে ফোন করে হাজার টাকা ধার চায় বিস্তারিত সবকিছু জানিয়ে। ফোনের ওপাশ থেকে সেই স্যার বলে ওঠেন, “তোমাকে টাকা ধার দিতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু তুমি টাকা শোধ দেবে কিভাবে? যদি তুমি চাও তোমার প্রয়োজনের থেকেও বেশি টাকা আমার থেকে পেতে পারো, সেজন্য তোমাকে……”

কথাগুলো শুনে বীথির চোখের সামনে ভদ্রবেশী সেই স্যারের মুখটা ভেসে ওঠে। নিজের ডিউটি শেষ করে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সে পৌঁছে যায় সেই স্যারের ফ্ল্যাটে। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই সেই স্যার দরজা খুলে দিয়ে বীথিকে ভিতরে আসতে বলে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর সেই স্যার একটা ব্যাগ ও খাম নিয়ে এসে বীথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন এটা ধরো। এরমধ্যে সামান্য কিছু বাজার ও ইলিশ মাছ রয়েছে। এটা দিয়েই আজ তোমার ছেলের জন্মদিন পালন করে নিও। এরপর তিনি বলেন, “আজ সেই অভিশপ্ত দিন, আজ থেকে তিন বছর আগে এই দিনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমি হারিয়েছি আমার গোটা পরিবারকে। কাকতালীয় ভাবে আজ আমারও মৃত ছেলের জন্মদিন। আজ থেকে তোমার ছেলের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমিই নিলাম এবং তুমি নিজেকে আমার বোন ভেবো।”
কথাগুলো শুনে বীথি ভেবে পায় না এই সময়ে তার কি করা উচিত। অশ্রুসিক্ত বীথি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করে সেই স্যারকে এবং মামা-ভাগ্নেকে একসাথে ইলিশ মাছ দিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here